তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদের জন্য তদবির


hadayet প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৮, ২০২৩, ৩:৫৪ পূর্বাহ্ন / ২৮
তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদের জন্য তদবির

দেশে দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ শূন্য রয়েছে। অন্য একটিতে শূন্য হবে ফেব্রুয়ারিতে। এ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এরই মধ্যে একটিতে নিয়োগের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। উপাচার্য পদে কে নিয়োগ পাচ্ছেন- এ নিয়ে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। নিয়োগ পেতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থক শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ নিয়ে ব্যাপক তদবির হচ্ছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ সরকারের সচিব পদমর্যাদার। সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে এই পদ অনেকের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। রীতি অনুসারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ তিনজন শিক্ষাবিদের নাম নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলরের কাছে নথি পাঠানো হয়। তিনি নিয়োগ দিলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।

বর্তমানে উপাচার্য ছাড়াই চলছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ও রাজধানীর বছিলার ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া রাজধানীর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) উপাচার্য পদ শূন্য হবে আগামী মাসে।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ (আহসান সাইয়ে্যদ) দুই মেয়াদে টানা আট বছর পূর্ণ করে ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনিই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ফিরে গেছেন। ফাজিল (ডিগ্রি) ও কামিল (মাস্টার্স) স্তরের মাদ্রাসাগুলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ২০১৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের জন্য যাঁদের নাম সরকারের বিবেচনায় রয়েছে, তাঁরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মারুফ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও ফার্সি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক মো. ইলিয়াস। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য নিয়োগের জন্য নামের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেমের মেয়াদ আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। উপাচার্য নিয়োগের প্রস্তাব এ সপ্তাহের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এ পদে নিয়োগের জন্য আলোচনায় রয়েছেন বুটেক্স শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক শাহ আলিমুজ্জামান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেখ মো. মোমিনুল আলম, বুটেক্সের সিন্ডিকেট সদস্য এবং বেসরকারি বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার আইয়ুব নবী খান এবং বুটেক্সের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. জুলহাস উদ্দিন।

এদিকে, ছয় মাস ধরে উপাচার্য নেই রুয়েটে। গত ৩০ জুলাই উপাচার্য হিসেবে চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করে বিদায় নেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ। এর পরদিন রুয়েটের অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। তবে বিধি ভঙ্গ করে তাঁকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

চার বছর দায়িত্ব পালনকালে উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগ ইউজিসি তদন্ত করে প্রমাণও পেয়েছে। তিনি তাঁর শ্যালক সোহেল আহমেদকে ‘পিএ টু ডিরেক্টর’ পদে, আপন ভাই মুকুল হোসেনকে ‘সেকশন অফিসার’ ও লেবারুল ইসলামকে ‘জুনিয়র সেকশন অফিসার’ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। গৃহকর্মী লাভলী আরাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক’ পদে এবং লাভলীর স্বামী এনামুল হককে ‘উপাচার্যের গাড়িচালক’ পদে নিয়োগ দেন। উপাচার্যের স্ত্রীর ফুফাতো ভাই মেহেদী হাসানকে ‘কেয়ারটেকার’ পদে, চাচাতো বোন মাছুমা খাতুনকে ‘ডাটা এন্ট্রি অপারেটর’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ফের উপাচার্য হতে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর আগের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বেগও চেষ্টা চালাচ্ছেন এ পদে ফিরতে।

এ ছাড়া উপাচার্য হতে রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফারুক হোসেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এন এইচ এম কামরুজ্জামান সরকার, একই বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও অধ্যাপক আবদুস সোবহান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক রেজিস্ট্রার ড. মোশাররফ হোসেন, গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামীমুর রহমান, যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক এমদাদুল হক, যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক নীরেন্দ্রনাথ মুস্তাফী ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, তড়িৎ ও কম্পিউটার অনুষদের ডিন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডল তদবির চালাচ্ছেন বলে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন রয়েছে।

এর বাইরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের মেয়াদ আগামী ১০ জুন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মেয়াদ ৩ নভেম্বর শেষ হবে। এদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১২ ডিসেম্বর জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আলম খানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদ শূন্য রয়েছে শুরু থেকেই।