পারিবারিক সহিংসতায় এক মাসে ৬৫ খুন


hadayet প্রকাশের সময় : মে ২২, ২০২৩, ৩:৪৩ পূর্বাহ্ন / ২৭
পারিবারিক সহিংসতায় এক মাসে ৬৫ খুন

দেশে গত এক মাসে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ৬৫ জন খুন হয়েছে। গণমাধ্যমে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত প্রকাশিত খবর ও পুলিশ সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে খুনের পেছনে সাতটি কারণ পাওয়া গেছে। এই কারণগুলো হচ্ছে যৌতুকের দাবি, মাদক কেনাবেচা, পরিবারে আধিপত্য বিস্তার, সম্পত্তির লোভ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সহিংস আচরণ এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আয়বৈষম্য।

অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, সব কিছুর মূলে রয়েছে সম্পর্কের বন্ধনের শিথিলতা ও নৈতিক অধঃপতন। এ কারণে আপনজনরা একে অন্যকে খুন করতে দ্বিধা করছে না। পারিবারিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে এই সম্পর্কের বন্ধন যেমন জোরদার করতে হবে, তেমনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগও জরুরি।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা

৬৫টি হত্যাকাণ্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে থানা-পুলিশ।

কিছু ক্ষেত্রে আসামি পলাতক।

১৩ মে ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় ইট দিয়ে আঘাত করার ঘটনায় সীমা খাতুন (২৪) নামের এক গৃহবধূ নিহত হন। এ ঘটনায় মাদকাসক্ত স্বামী রিকশাচালক জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

১২ মে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় আগুনে পুড়ে নিলুফা ইয়াসমিন হ্যাপি (২৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তাঁর স্বামী মো. রনির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ৭ মে নরসিংদীর রায়পুরায় নেশাগ্রস্ত ছেলের দায়ের কোপে আইনুল হক (৭০) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হন।

৬ মে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নে দুই শিশু মুশফিক (৫) ও মাশরাফিকে (২) হত্যা করে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন মনিরা বেগম নামের এক নারী। ৫ মে নীলফামারী সদরে ভাশুরের লাঠির আঘাতে রাকিবা আক্তার (২৯) নামের এক গৃহবধূ নিহত হন।

৩ মে নোয়াখালীর চাটখিলে পরকোর্ট ইউনিয়নে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাতিজার লাঠির আঘাতে আবুল বাশার (৪০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

একই দিন নরসিংদীর শিবপুরে পারিবারিক কলহের জেরে তারেক ভূঁইয়া (২৪) নামের এক তরুণ তাঁর ভাই তরিকুল ভূঁইয়াকে (২৭) খুন করেন। ১ মে সকালে কুষ্টিয়া সদরে পানির মোটর চুরির ঘটনায় ছোট ভাই শহিদুলের হামলায় বড় ভাই রাশিদুল ইসলাম (২৬) মারা যান। একই দিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভগ্নিপতি বাবু বেপারীর রডের আঘাতে মাদকাসক্ত শাকিল হোসেন (১৮) নামের এক যুবক মারা গেছেন।

গত ৩০ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুরে রায়হান (১২) নামের একটি শিশু তার বাবার হাতে খুন হয়েছে। একই দিন বরিশাল নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড পলাশপুর এলাকার আবীর ইসলাম জিহাদ (৫) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মা মরিয়ম বেগম এবং সত্বাবা মিলন হাওলাদারের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে, বিশেষ করে নগরজীবনে। সেখানে জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। সবাই ব্যস্ত থাকায় কেউ কাউকে সময় দিতে পারছে না। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে বন্ধন থাকার কথা, সেটি অনেক সময় থাকছে না। যে যার মতো করে চলতে গিয়ে চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামে বেশির ভাগ পারিবারিক সহিংসতার মূলে রয়েছে জমিজমা নিয়ে বিরোধ।’

এ থেকে উত্তরণের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবারে বড়দের প্রতি ছোটদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। ছোটদের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে বড়দের। এ ছাড়া দেশে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। কারণ শাস্তি না হওয়ায় মানুষ অপরাধ করতে ভয় পায় না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, যেকোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোরভাবে দেখে থাকে। প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে পারিবারিক ঘটনায় স্বজনদের হাতে স্বজন খুনের বিষয়ে বেশি করে সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন।