তারা আজ বেঁচে নেই। আমি তাদের সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় এবং সমাবেশের সভাপতি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ সালাম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী এমপি, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী এমপি, ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, এমএ লতিফ এমপি, দিদারুল আলম চৌধুরী এমপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। রিজার্ভের অর্থ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। ব্যাংকে কোনো অর্থ সংকট নেই। অনাহূত গুজবে কান না দেওয়ার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আর কোনো দেশ বিনামূল্যে সাধারণ মানুষকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়নি। আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়াবার জন্য কৃষকদের অর্থ প্রদান করেছি, বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করেছি, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তি প্রদান করছি। ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন রিজার্ভ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। সে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছি। দেশের উন্নয়ন ও জনগণের জন্যই অর্থ ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত গুজব ছড়াচ্ছে। আপনারা এ ধরনের গুজবে কান দেবেন না। কেউ চিলে কান নিয়ে গেছে বললে কানের জায়গায় কান আছে কিনা দেখে নেবেন।
তিন মেয়াদের শাসনামলে সারাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি বিশেষভাবে চট্টগ্রামে বাস্তবায়িত মেগাপ্রকল্পগুলোর নাম উল্লেখ করেন। তার বক্তব্যে উঠে আসে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড, কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালসহ বড় বড় প্রকল্পগুলোর কথা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেন হয়েছে। এটিকে ছয়লেনে উন্নীত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল হবে। এর সমীক্ষা কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। সন্দ্বীপে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি।
বিএনপি-জামায়াতের গুজব ছড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো খাদ্যের অভাব নেই। আমরা সাধারণ মানুষকে খাদ্যে কষ্ট দেব না। খাদ্যের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়িয়েছি। মাছ, তরিতরকারিসহ সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন বেড়েছে। খাদ্য শস্যের যথেষ্ট মজুত আমরা ঠিক রাখছি। গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। এদেশে কেউ ভূমিহীন থাকবে না। গরিব কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট করতে পারছে।
প্রধানমন্ত্রী রিজার্ভ সংকটের গুজবে কান না দেওয়ার কথা বলে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্তমান বৈশি^ক অবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, লন্ডন শহর এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও এ শীতে গরম পানি ও বিদ্যুতের অভাব দেখা দিয়েছে। আমাদের তেমন হবে না। তবে আপনাদের সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে। সঞ্চয় করতে হবে। কোনো জমি অনাবাদি ফেলে রাখা যাবে না। যদি সকলের সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে বাংলাদেশ কোনো সংকটে পড়বে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে তার জনসভায় নির্বিচারে গুলি চালানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, সেদিন পুলিশ গুলি চালিয়ে ২২ জনকে হত্যা করেছিল। দলের নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেছিল। যে পুলিশ কর্মকর্তা রকিবুল হুদার নির্দেশে এই গুলি চালানো হয়েছিল বিএনপি ক্ষমতায় এসে তাকে প্রমোশন দিয়েছে। সে কর্মকর্তাকে পুলিশ প্রধানও করা হয়েছিল।
বিএনপিকে খুনির দল অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর অনেক সদস্যকে হত্যা করেছিল। ওই সময়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ নির্বিশেষে কেউ রেহাই পায়নি।
বিএনপির আগামী ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনেই ইত্তেফাকের সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন ও পিটিআই সাংবাদিক নাজমুল হকসহ অনেককে ধরে নিয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা। বস্তুত সেদিন থেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়। এই জন্যই সেই ১০ ডিসেম্বর তারিখটি বিএনপির পছন্দের দিন। সেদিন তারা ঢাকা ঘেরাও করার কর্মসূচি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। খালেদা জিয়ার বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। জনগণের আন্দোলনের মুখে ৩০ মার্চ সে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বিএনপি ভোটে যেতে চায় না। জিয়াউর রহমান যেভাবে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপিও সেভাবেই যেতে চায়। দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপি দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক তা চায় না। কারণ তারা উন্নয়ন চায় না। বর্তমান সরকার আমলে অর্থনীতির অগ্রযাত্রা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির শাসনামলে ওরা ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল। আর আমরা ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। বিএনপির নানা সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান দুই পুত্র রেখে গেছেন। এদের একজন মেট্রিক পাস, আরেকজন ইন্টারমেডিয়েট পাস। এ ছাড়া আরেকজন এইট পাস। ওরা কী অর্থনীতি বুঝবে।
বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুইগুণ। ভোট চুরি আর মানুষ খুন। তারা ইলেকশন চায় না। তারা অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন ও রাস্তা কেটে মানুষ হত্যা করেছিল। যানবাহনের আগুনে মারা গিয়েছিল অন্তত ৪শ মানুষ। তিনি বলেন, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল। আগুনে পুড়ে শতশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এ সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল। পুড়েছে অনেক যানবাহন। আওয়ামী লীগ সরকার এসব ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। এই অগ্নিসন্ত্রাসের জবাব একদিন খালেদা-তারেককে দিতে হবে। মানুষ এ হিসেব একদিন নেবে। বিএনপি ধ্বংস করে আর আমরা সৃষ্টি করি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়াউর রহমান যখন মারা যান তখন আমরা টেলিভিশনের খবরে শুনেছিলাম তিনি একটি ভাঙ্গা সুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে তারেক রহমান হাজার হাজার কোটি টাকা কীভাবে করল? সেই ভাঙ্গা সুটকেস কি জাদুর বাক্স হয়ে গিয়েছিল?
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শেষদিকে বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ ধারণ করি। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাঁর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ইনডেমনিটি দিয়ে রুদ্ধ করে রাখা হয়। অথচ, আল্লাহর রহমতে জাতির পিতার ভাষণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, আজ বিজয়ের মাসে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও বিজয়ী করার আহবান জানান। এ সময় জনতা হাত তুলে তাঁকে সমর্থন জানান। এর আগে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করার আহবান জানান। সংবিধান সংশোধন দিবাস্বপ্ন, সেটি ভুলে যান। তত্বাবধায়ক সরকারের ভূত মাথা থেকে নামান। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এ চট্টগ্রামে শিল্পনগর, বঙ্গবন্ধু টানেল, আউটার রিং রোড, কক্সবাজার রেল লাইনসহ অনেক মেগা প্রক্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, এদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তির দেশে পরিণত হয়েছে। বিরোধীদলের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ইট মারলে পাটকেলটি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন তাঁর বক্তব্যে সিআরবি থেকে বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা পরিকল্পনা থেকে সরকারের সরে আসার ঘোষণা দেন। মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ^াস করে না। চট্টগ্রাম থেকেই ওদের অশুভ চক্রান্ত নিঃশেষ করে দেয়ার আন্দোলন শুরু করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :