আর মাত্র কয়েক মিনিট। মনের কোণে উঁকি দিচ্ছে নানা ছবি। এর মধ্যে একটি হলো, রেফারির বাঁশিতে ফুঁ পড়েছে। ম্যাচটি শেষ হয়ে গেছে। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে উৎসবে মেতে উঠেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন সাবিনা খাতুনরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই এ দৃশ্যটা বাস্তব হয়ে ধরা দিল। ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়ে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০২২ সালে নেপালের মাঠ থেকেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ। সেবার স্বাগতিকদের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ৩-১ ব্যবধানে।
ফাইনাল ম্যাচের তখন ৮১ মিনিট। ডি বক্সের বাঁ দিক থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার জোরালো শট। নেপালি গোলরক্ষক আনজিলা ফিস্ট করেবলটা গোলবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন। ব্যর্থ হন তিনি।
বল জড়িয়ে যায় জালে। মুহূর্তেই বাংলাদেশের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা উড়ে যায়। উল্লাসে মেতে ওঠেন মেয়েরা। তাঁদের সঙ্গে উৎসব করে ইউটিউবের পর্দায় চোখ রাখা লাখো লাখো ফুটবলপ্রেমী। এর আগে ম্যাচের ৫২ মিনিটে মনিকা চাকমার গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৪ মিনিট পর আমিশা কারকির গোলে সমতায় ফেরে নেপাল। এর পর থেকেই উৎকণ্ঠায় ভুগছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বিজয়ের ডঙ্কা বাজালেন সাবিনা খাতুনরা।
দুই বছর আগে নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামেই স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মেতেছিলেন সাবিনা খাতুনরা। শামসুন্নাহার জুনিয়র ১৩ মিনিটেই সে ম্যাচে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর কৃষ্ণা রানী সরকার ৪২ ও ৭৭ মিনিটে ২টি গোল করেন। মাঝখানে নেপালের অনিতা ৭০ মিনিটে ১টি গোল করলেও বাংলাদেশের জয় রুখতে পারেননি। সে জয়ের পর দেশজুড়ে উল্লাসে মেতেছিলেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। সাবিনাদের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল ছাদখোলা গাড়ি। চ্যাম্পিয়ন লেখা সেই বাসে চড়ে শহরময় দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছিলেন মেয়েরা। আরও একবার সাফের সেরা হতেই নেপাল যাত্রা করেছিলেন সাবিনারা। যাত্রার আগে বলে গিয়েছিলেন, শিরোপা ধরে রাখার মিশনে সফল হতে চান বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। কথা রেখেছেন মেয়েরা। এবার ফুটবলপ্রেমী মানুষও নিশ্চয়ই ভালোবাসার মালা হাতে নিয়ে অপেক্ষায় থাকবেন নারী ফুটবলারদের। আজই দুপুরের পর ঢাকায় আসছেন চ্যাম্পিয়ন সাবিনা খাতুনরা।
দুই বছর আগে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে দেশে ফেরার পর সাবিনাদের নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের উৎসব ছিল বাঁধভাঙা। এবারও নিশ্চয়ই তা-ই হবে। এবার সাফ যাত্রার আগে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। বিশেষ করে নতুন কোচের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার খুব বেশি সময় পাননি সাবিনারা। তার পরও সব অনিশ্চয়তা দূর করে দিলেন তাঁরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে। ছিনিয়ে আনলেন দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের সেরার মুকুট। লিখলেন নতুন এক ইতিহাস। বাংলাদেশের বিরল এ কীর্তি কাঁদাল নেপালকে। ছয়বার ফাইনাল খেলেও শিরোপার দেখা পেলেন না দেশটির মেয়েরা।
আপনার মতামত লিখুন :