কবে ফিরবে রোহিঙ্গারা


hadayet প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ৩:২৯ পূর্বাহ্ন /
কবে ফিরবে রোহিঙ্গারা
বাংলাদেশের কাঁধ থেকে সহসাই নামছে না ‘রোহিঙ্গা বোঝা’। গত ৪৬ বছরে দেশে ভর করেছে কমপক্ষে সাড়ে তেরো লাখ রোহিঙ্গা। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিয়ানমার সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইচ্ছার অভাবে ভেস্তে যাচ্ছে সব উদ্যোগ। প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ার কারণে সহিংস হয়ে উঠছে শরণার্থী ক্যাম্পগুলো। বাড়ছে অপরাধ। দেশে ফেরা উদ্যোগগুলো ব্যর্থ হওয়ায় উন্নত জীবনের আশায় সাগর পথে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ। নিরাপত্তা বিশ্লেষক কমডোর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, আরকানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের ঘটনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ফোকাস রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনের দিকে সরে যাওয়া এবং কিছু পরাশক্তি রাষ্ট্রের আরকানকেন্দ্রিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় থাকায় প্রত্যাবাসন ইস্যু চাপা পড়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমার পাঠাতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ নেই।’

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় দিনদিন অপরাধ বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয়দের অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে না পারলে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে হবে আমাদের।’

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা বলেন, ‘মিয়ানমারের আরকানে সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা আসছে। তার মধ্যে ৫ আগস্টের আগে পরে কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের পরে ক্যাম্পগুলোতে ১০ লাখের বেশি রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ছিল। ক্যাম্পগুলোতে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিশু জন্ম গ্রহণ করছে।’ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নেতা সিরাজুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কবে দেশে ফিরবে তা আমরা জানি না। আমরা আর বাংলাদেশের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ, যে কোনো উপায়ে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু হোক।’

উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি দিচ্ছে সাগর : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা উন্নত জীবনের আশায় সাগর পাড়ি দিচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সাগরে বিপজ্জনক এ যাত্রা পথে কেউ কেউ অবৈধভাবে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড পৌঁছাতে পারলেও কারও কারও ক্ষেত্রে সাগরেই হচ্ছে জীবনের পরিসমাপ্তি। তারপরও থামছে না সাগর পথে রোহিঙ্গাদের বিদেশ যাত্রা।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা খাদ্যের অভাবে কষ্টে জীবন পার করছেন। এ কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পেতে তারা যেদিকে সুযোগ পাচ্ছেন সেদিকে পালাচ্ছেন। অনেকে উন্নত জীবনের আশায় সাগরপথে মালয়েশিয়ায় থাইল্যান্ড যাচ্ছে। এ যাত্রা কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না।’