
রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা দিচ্ছেন আট দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক রিচার্ড বেলে গতকাল ঢাকায় পৌঁছেই এভারকেয়ারে যান। গত রাতে চীন থেকে আরও চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছেন। যুক্তরাজ্য, চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, স্বাস্থ্যের আশানুরূপ উন্নতি না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে না। এদিকে এসএসএফ প্রটোকলের অংশ হিসেবে আজ বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালসংলগ্ন মাঠে হেলিকপ্টার মহড়া হবে। সরকার ইতোমধ্যে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ভিভিআইপি মর্যাদা ঘোষণা করেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে আসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া সরকারের উপদেষ্টা ও রাজনীতিকরা হাসপাতালে যান।
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির দোয়া কর্মসূচি অব্যাহত। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে- বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান অসুস্থতার জন্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার দায়ী।
শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল : বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। টানা এক সপ্তাহ তিনি সিসিইউতেই আছেন। বেগম জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বিশিষ্ট হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নুরুদ্দীন আহমদ জানান, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত। তিনি আগের মতোই আছেন। স্বাস্থ্যের উন্নতি বা অবনতি কোনোটাই বলা যাচ্ছে না। আশানুরূপ উন্নতি না হলে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে না।
মেডিকেল বোর্ডের আরেক সদস্য বলেন, চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা ম্যাডামকে ডাক দিলে তিনি সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এটাকে আশানুরূপ বলা যাচ্ছে না। তাঁর স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার ওঠানামা করছে। এই চিকিৎসক আরও জানান, প্রতি রাতেই ঘণ্টাদেড়েক বৈঠক করে মেডিকেল বোর্ড। যেখানে দেশি-বিদেশি অন্তত দেড় ডজন চিকিৎসক যুক্ত হন। লন্ডন ক্লিনিকের বিখ্যাত চিকিৎসকরাও ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত হন। ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকেন চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমান ও তাঁর চিকিৎসক স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান।
বৈঠকের পর নতুন করে বিভিন্ন টেস্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসায় পরিবর্তন আনা হয়। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, এ মুহূর্তে ম্যাডামকে দেশের বাইরে নেওয়ার সুযোগ নেই।
আমাদের সব প্রস্তুতি আছে; কিন্তু সর্বোচ্চটা মনে রাখতে হবে যে, রোগীর বর্তমান অবস্থা এবং সর্বোপরি মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ এই মুহূর্তে আমাদের নেই।
খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা : সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে বসুন্ধরায় অবস্থিত এ হাসপাতালে প্রবেশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিচতলায় প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে চার তলায় সরাসরি চেয়ারপারসনের কেবিনে নিয়ে যান।
বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জে এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বেগম জিয়ার পরিবার ও দলের নেতা-কর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর চিকিৎসক দল প্রধান উপদেষ্টাকে ব্রিফ করেন। তাঁরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই ও জনস হপকিন্স এবং যুক্তরাজ্য ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় বেগম জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানান। হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।
ব্রিটিশ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায় : চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক রিচার্ড বিল ঢাকায় এসেছেন। গতকাল সকাল ১০ট ২০ মিনিটে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তিনি দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এভারকেয়ারে অধ্যাপক ডা. রিচার্ড বিলকে স্বাগত জানান। অধ্যাপক জাহিদ জানান, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কাতার, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সরাসরি ও ভার্চুয়ালি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহযোগিতা করছেন।
চীনের আরও চার চিকিৎসক ঢাকায় : এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার্থে গতকাল রাতে চীন থেকে আরও চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আসেন। চীনের এই চার চিকিৎসক হলেন- ডা. কাই জিয়ানফাং, ডা. ইউয়ান জিন, ডা. ঝাং ইউহুই ও ডা. মেং হং।
হাসপাতালের মাঠে হেলিকপ্টার মহড়া হবে : সরকারের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী আজ দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালসংলগ্ন দুটি উন্মুক্ত মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালনা করবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ এ তথ্য জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাঁকে সিসিইিউতে নেওয়া হয়। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চলছে দেশের বর্ষিয়ান এই রাজনীতিকের।
আপনার মতামত লিখুন :