খুলনায় বিএনপির সমাবেশ : গণপরিবহন বন্ধ, পথে পথে দুর্ভোগ


hadayet প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২২, ২০২২, ৫:১১ পূর্বাহ্ন / ৩৯
খুলনায় বিএনপির সমাবেশ : গণপরিবহন বন্ধ, পথে পথে দুর্ভোগ

খুলনায় আজ শনিবার বিকেল ৩টায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। কর্মসূচি সফল করতে নগরের ফেরিঘাট মোড়ের সোনালী ব্যাংক চত্বরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এর মধ্যেই গতকাল শুক্রবার থেকে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বন্ধ রয়েছে লঞ্চও।এতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বিএনপি বলছে, তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিতে পুলিশ দিয়ে নেতাকর্মীদের আটক ও হয়রানির পাশাপাশি গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

খুলনার সঙ্গে আন্ত জেলা সংযোগকারী ১৮টি রুটের বাস এবং খুলনা থেকে চলাচলকারী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল থেকে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের আসন্ন কালীপূজা সামনে রেখে অনেকে কর্মস্থল থেকে খুলনার বাড়িতে আসছে। দূর থেকে এসে সেসব যাত্রী বিপাকে পড়েছে। বাসের পাশাপাশি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও ভাড়ায় চালিত অন্যান্য যানবাহনের সংকটের কারণে মানুষকে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করতে হচ্ছে।

পারিবারিক কাজে মো. আসাদুজ্জামান গতকাল সকালে নগরীর বয়রার বাসা থেকে বেরিয়ে সোনাডাঙ্গা আন্ত জেলা বাস টার্মিনালে যান। বাস বন্ধ থাকবে, এটা তিনি জানেন। অন্য যানবাহনে করে তিনি মোংলা যেতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু বাস টার্মিনালে এসে দেখেন, সব যানবাহনই বন্ধ। তিনি বলেন, ‘অন্য সময়ে মাইক্রোবাস ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে; কিন্তু এখন তা-ও নেই। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলও নেই। ’ আন্দোলন-সংগ্রাম মানেই জনগণের ভোগান্তি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর কথায় সুর মেলান ঢাকা থেকে আসা গার্মেন্ট শ্রমিক সুদীপ্ত। তিনি কালীপূজা উপলক্ষে বাড়ি যাচ্ছেন। তাঁর বাড়ি সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার আমাদি গ্রামে। ভোরে তাঁকে বাস থেকে যশোরে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর বাড়তি টাকা খরচ করে খুলনা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে পৌঁছেছেন; কিন্তু সেখান থেকে যাওয়ার কোনো বাহনই পাচ্ছেন না। পড়েছেন মহাফাঁপরে।

গতকাল দুপুরে খুলনা থেকে চলাচলকারী আটটি লঞ্চও বন্ধ রাখা হয়েছে। লঞ্চ শ্রমিকদের বেতন-মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে এই ধর্মঘট বলে দাবি করা হয়েছে।

গত বুধবার বাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে দুই দিন বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ দাবি করা হয়েছে, মহাসড়কে নছিমন-করিমন-ভটভটিসহ সব অবৈধ যান চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে খুলনায় দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নেতা কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, ‘বুধবার খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির জরুরি সভায় পরিবহন দুই দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক-মহাসড়কে নসিমন-করিমন, মহেন্দ্র, ইজি বাইক ও বিটিআরটিসির গাড়ি চলাচল বন্ধের দাবিতেই এই ধর্মঘট। ’ সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, বিরোধী দলের কর্মসূচি ঠেকাতে আচমকা পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনগণকে জিম্মি করা হয়েছে।

বিএনপির খুলনা মহানগর শাখার আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, সমাবেশে যাতে নেতাকর্মীরা উপস্থিত হতে না পারেন এ কারণে পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কারণ ছাড়াই নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাঁদের আটক করে সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করা হবে। সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। বিএনপির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু দুই দিন আগেই খুলনায় পৌঁছেছেন।

বিএনপির প্রেস ব্রিফিং

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি জেলা ও নগর কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। এতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, সরকারের পুলিশ বাহিনী সমাবেশ বানচাল করার জন্য এ পর্যন্ত খুলনাতেই দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। মাগুরা থেকে এক বাসভর্তি নেতাকর্মী এসেছিলেন, সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ সেই বাসসহ যাত্রীদের আটক করেছে।

জমজমাট কেডি ঘোষ রোড

গতকাল দুপুরে খুলনা নগরের কেডি ঘোষ রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় ছিল। নগরের দোকানপাট বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে লোক চলাচল কম ছিল। অবশ্য সমাবেশ উপলক্ষে কেডি ঘোষ রোড ছিল জমজমাট।

মাগুরা থেকে এসেছেন হারুন-অর-রশিদ। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বৃহস্পতিবারই খুলনায় এসে পৌঁছেছেন। তাঁর সঙ্গে আরো পাঁচ বন্ধু এসেছেন। তাঁরা উঠেছেন তাঁদের এক বন্ধুর মেসে। তাঁরা সমাবেশস্থল সোনালী ব্যাংক কার্যালয় চত্বর ঘুরে দলীয় কার্যালয়ে এসেছেন। কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় এমনিভাবে জড়ো হয়েছিলেন মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, কয়রা প্রভৃতি এলাকা হতে আসা নেতাকর্মীরা।

যুবলীগের কর্মসূচি

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে শুক্রবার সকালে মোটরসাইকেল মিছিল হয়। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ মিছিল। নগরের শিববাড়ী মোড় এলাকা হতে মিছিল বের হয়ে ফেরিঘাট, ডাকবাংলো হয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে মিছিল শেষ হয়। যুবলীগের এই কর্মসূচি থাকার কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সমাবেশের মঞ্চ বিকেলে তৈরি না করে সন্ধ্যার পর তৈরি করার অনুরোধ করা হয়েছে বলে বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার নেতা এহতেশামুল হক শাওন কালের কণ্ঠকে জানান। পরে সন্ধ্যা ৭টার পর মঞ্চ তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়।

সমাবেশস্থল মঞ্চ

সমাবেশের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা এহতেশামুল হক শাওন বলেন, বিভাগীয় এই সমাবেশে কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা শাখার দেড় শতাধিক নেতা মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারবেন, এমন মঞ্চ তৈরি করা হবে। সেভাবেই প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। রাতের মধ্যে বৃহৎ এই মঞ্চের কাজ শেষ হবে। কেডি ঘোষ রোডের জেলা ও মহানগর শাখা কার্যালয়ের সামনে ঢাকা থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর আনা হয়েছে।

যশোরে ব্যাপক ভোগান্তি

গতকাল খুলনার উদ্দেশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসার পর বাসযাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয় যশোরে। খুলনাগামী বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা। এসব যাত্রীকে নসিমন, থ্রি-হুইলার, ইজি বাইকসহ অন্য ছোট ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে খুলনার উদ্দেশে রওনা হতে হয়। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি বাড়তি খরচ গুনতে হয়। বাস বন্ধ থাকায় যশোর রেলস্টেশনে খুলনাগামী যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড় ছিল।

যশোর শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয় কথা হয় ঝিনাইদহ থেকে আসা শওকতের সঙ্গে। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। স্ত্রীকে নিয়ে যাবেন খুলনার একটি ক্লিনিকে রোগী দেখতে; কিন্তু যশোর পৌঁছার পর বাস আর যাবে না শুনে তিনি বিরক্ত। তিনি বললেন, ‘যেভাবেই হোক খুলনায় যেতে হবে। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর এই চাচাই বড় করেছেন। এখন দেখি, খুলনা পৌঁছাতে কী ভোগান্তি পোহাতে হয়। ’

ফিরে গেছে অনেকে

পিরোজপুরের নাজিরপুরের সঙ্গে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি রুটের সঙ্গে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আর এতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে ভারত ছাড়াও যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বেনাপোল, রাজশাহীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি রুটের যাত্রীদের।