নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্ধা নাজমুল। প্রতিদিন সকালেই তাকে ছুটতে হয় মতিঝিলের অফিসের উদ্দেশ্যে। বৃহস্পতিবার সকালেও তিনি রওয়ানা হয়েছেন বাসা থেকে পৌনে আটটায়। কিন্তু রাজধানীর শিয়া মসজিদ মোড় থেকে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ পর্যন্ত এক কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক পাড়ি দিতে তাঁর সময় লেগেছে পৌনে এক ঘণ্টা।
আবার গণভবনের সামনে থেকে মিরপুর সড়ক ধরে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত যেতে লেগেছে আরও প্রায় এক ঘণ্টা।
যানজটের এই চিত্র শুধু বৃহস্পতিবারের নয়। সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও একইভাবে যানজটে আটকে তাকতে হয় নাজমুলদের মত কর্মজীবীদের। সেই যানজটে ঘি ঢালে রাজনৈতিক কর্মসূচী। কর্মদিবসে রাজধানীতে রাজনৈতিক কর্মসূচী যেন ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত।
বিশেষ করে সরকার পতনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর চলতি মাসের কর্মসূচী নগরবাসীকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এমনিতে যানজটের কারণে এমনিতেই রাজধানীবাসী নাকাল। তার ওপর কর্মদিবসগুলোতে রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে অফিসে যাওয়া থেকে শুরু করে বাসায় ফেরা পর্যন্ত কঠিন যুদ্ধ করেই কর্মজীবী মানুষদেরকে।
বিএনপিসহ তাদের শরিকরা ক্ষমতাসীন সাংবিধানিক সরকারের পতন ও অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ৭ অক্টোবর থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক অনেকগুলো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচির বেশিরভাগই ডাক দেওয়া হযেছে কর্মদিবসে। প্রশাসনের অনুরোধ সত্ত্বেও কর্মদিবসে আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগের এসব কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে বিএনপি জোট।
শনিবার, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচীর প্রথম দিনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমাবেশ করেছে দলটি। বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবীতে ৯ অক্টোবর সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা ও মহানগরে সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দলটি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র কনভেনশন করবে। ১৪ অক্টোবর, শনিবার খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবীতে বিএনপি’র রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা ও মহানগরগুলোতে অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ১৬ অক্টোবর, সোমবার বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১ দফা দাবীতে রাজধানী ঢাকায় যুব সমাবেশ আহবান করেছে সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটি। আর ১৮ অক্টোবর বুধবার এক দফা দাবিতে রাজধানী নয়া পল্টনে সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি।
কর্মদিবসে আন্দোলনের এসব কর্মসূচি দেখে নগরবাসী পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। তারা বলছেন,কর্মদিবসে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিগুলো সরকার পতন তো দূরের কথা শুধু নগরবাসীর ভোগান্তিই বাড়াবে। কারণ তাদের এই অহেতুক কর্মসূচির কারণে শহর জুড়ে একটা অচলাবস্থা তৈরি করে। দিনভর নগরবাসীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে নগরীতে গণপরিবহন পাওয়া যায় না।
উত্তরার বাসিন্ধা বেসরকারি চাকুরিজীবী ফজলুর রহমান বলছিলেন, আমাদের কথা কে শুনে। আমরা তো আমজনতা। আমাদেরকে কাবাব বানিয়ে আন্দোলন করা হয়। দুর্ভোগটা আমাদেরই সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, এসব কর্মসূচীর বিকর্প ভাবা উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর।
মিরপুর-১২ থেকে প্রায় প্রতিদিন যুদ্ধ করে অফিসে যেতে হয় সাখাওয়াত হোসেনকে। তিনি বলেন, এক একটা কর্মসূচি আমাদের জন্য এক একটা বোমা। কারণ কর্মবিসে এসব কর্মসূচির কারণে রাজধানীতে চলাচল কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া বিরোধী দল যেভাবে অতীতে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করেছে তাতে ভয়টা একটু বেশিই। কারণ সরকারের শেষ সময়ে এসে বিরোধী দল যদি আন্দোলন আর সভা-সমাবেশের নামে ধ্বংসাত্বক কাজ করে তাহলে তো আমাদের মতো নিরীহ মানুষদেরকে মরতে হয়।
এদিকে কর্মদিবসে রাজনৈতিক কর্মসূচি না দিতে বিরোধী দলগুলোকে আগেও ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুরোধ সত্ত্বেও বিএনপি ও তাদের শরিকরা নিয়মিতই কর্মদিবসে আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছে এবং দিয়েছে। ফলে রাজধানী প্রায়ই অচল হয়ে পড়ছে। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
সম্প্রতি বিশ্বে ধীরগতির শহর হিসেবে শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকার নাম। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী মানুষের বাস রাজধানী ঢাকাতে। জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। বৃষ্টি সহ বিভিন্ন মানবসৃষ্ট দুর্যোগে প্রায়ই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে যা জন দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে।
যদিও সরকার রাজধানীকে যান ও জল জট মুক্ত করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
এদিকে বিএনপির আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্বক কর্মসূচি থেকে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের নামে পাল্টা দলটি জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে এসব কর্মসূচি পালন করছে বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ডিএমপির নির্দেশনাকে মাথায় রেখে এবং ডিএমপির অনুমতি সাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সহ খোলামাঠে কর্মসূচি পালন এবং কর্মদিবসে কর্মসূচি পালন না করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্র ও শনিবার ছাড়া, অন্য কোনদিন র্যালি বা শোভাযাত্রা না করার সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
এসব কর্মসূচীর বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিগত দিনে বিএনপির কর্মসূচি গুলো দেখলে সহজেই বুঝা যায় যে; আমরা অধিকাংশ কর্মসূচি বিশেষ করে ঢাকায় যে সমস্ত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করেছি তা ছিল শুক্রবার ও শনিবার। কিন্তু বর্তমানে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হচ্ছে সেখানে বার কোনো মুখ্য বিষয় নয়।
আপনার মতামত লিখুন :