কী লুকাতে কৌশলী হচ্ছেন সাংবাদিক আশফাক দম্পতি


hadayet প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০২৪, ৭:৫২ পূর্বাহ্ন / ৪২
কী লুকাতে কৌশলী হচ্ছেন সাংবাদিক আশফাক দম্পতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেইলিস্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হক এর বাসা থেকে প্রীতি উরাং নিহতের ঘটনায় এই দম্পতি কিছু লাকাতে চাইছেন সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। তাদের সন্দেহের কারণে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ দম্পতি কিছু উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কৌশল অবলম্বর করেছেন। প্রকৃত ঘটনা বের করতে হলে নিবীড় জিজ্ঞাসাবাদের দরকার আছে বলে মনে করছেন বলেই রিম্যাণ্ড চাওয়া হলে আদালত চারদিনের রিম্যাণ্ড মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু কি সেই তথ্য যা আশফাক দম্পতি আড়ালে রাখতে চান?

গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে শাহজাহান রোডের জেনিভা ক্যাম্প সংলগ্ন ভবনের নবম তলায় আশফাকুল হকের বাসা থেকে পড়ে মারা যায় প্রীতি উরাং নামের ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরী।  ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার শঙ্কা নিয়ে কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। এরইমধ্যে প্রীতি উরাংয়ের মারা যাওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন তার বাবা। সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মিতিংগা চা বাগানে কয়েকটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে লোকেশ উরাং এই দাবি জানান। এ সময় প্রীতি উরাংয়ের মা, পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার দিনই নির্বাহী সংম্পাদক আশফাকুল হক ও তানিয়ে খন্দকারকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

ঘটনার দিন রাতে মৌলভীবাজার থেকে প্রীতির অভিভাবককে নিয়ে আসা হয় এবং থানায় মামলা নেওয়া হয়। যদি কেনো  হত্যা মামলা না হয়ে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর কথা এজাহারে কেনো উল্লেখ করা হলো সে নিয়ে অনেক প্রশ্ন। কেননা, খোদ তার মা বলছেন, তার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। মেয়ের মা বলছেন, ‘আমরা চা শ্রমিক। অভাবের সংসারে কোনোরকম বেঁচে আছি। পরিবারের স্বচ্ছলতার কথা চিন্তা করে দুই বছর আগে সাংবাদিক মিন্টুর মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজে ঢাকার মোহাম্মদপুরে এক সাংবাদিকের বাসায় কাজে পাঠাই মেয়েটিকে। সাংবাদিক মিন্টুর কথায় আমার মেয়েটিকে কাজে দিলাম। ঢাকায় ওরা আমার মেয়েটিকে মেরে ফেলল।’ যে মা প্রতিবাদ সমাবেশে এসে মেয়েকে মেরে ফেলার অভিযোগ করছেন সেই অভিভাবক ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ ধারায় মামলা করেছেন এটা খটকার কারণ বলে মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা। এদিকে বাবা লোকেশ অভিযোগ করেছেন, শুরু থেকেই মেয়ের তেমন খোঁজ-খবর পাওয়া যেত না।প্রীতির মৃত্যুর দিন মিন্টু দেশোয়ারা তাদের শ্রীমঙ্গল যেতে বলেন। শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পর মেয়ে মারাত্মক অসুস্থ বলে তাদের ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকা যাওয়ার পর সরাসরি তাদের থানায় নিয়ে যায়। গিয়ে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনি। পরে মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি চলে আসি। মেয়ের মৃত্যুর বিচার চাই।”

তিনদিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদেও কিছু ‘কৌশল’ নজর এড়ায়নি তদন্ত কর্মকর্তার। আদালতে আবারও রিমান্ড আবেদনে তারা বলছেন, ঘটনাস্থলে একটি সিসি ক্যামেরা আছে, যার মধ্যে ভিডিও রেকর্ডের জন্য একটি মেমোরি কার্ডের স্লট থাকলেও সেখানে মেমোরি কার্ড পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা ‘কৌশলে বিভিন্ন যুক্তি’ দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান জানিয়ে আবেদনে বলা হয়, “ধারণা করা হচ্ছে ওই ক্যামেরায় ঘটনার ভিডিও ধারণ হয়ে যাওয়ায় আসামিরা ঘটনার পরপরই সেখানে থেকে আলামত নষ্ট বা গোপন করার জন্য ওই মেমোরি কার্ড লুকিয়ে রাখতে পারেন।”

আর আদালতে আশফাক দম্পতি নিজেদের ‘অবহেলা’টুকুর বাইরে প্রীতির ওই বারান্দার প্রতি আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। রিমান্ড শুনানিতে বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে আশফাকপত্নী তানিয়া বলেন, প্রীতি ছিল ‘খুব আহ্লাদী’। “আমার বাচ্চাদের হেল্প করার জন্য, আমার বাসায় ছোটো বুয়া হিসেবে কাজ করার আগ্রহ দেখালে আমরা তাকে প্রথমে আম্মার বাসায় দিই। পরে আমাদের এখানে।  “জানালার পাশের ওই জায়গাটি (যে জায়গা থেকে আগের শিশু গৃহকর্মী লাফিয়ে পড়ে) দেখার খুব কৌতূহল ছিল ওর (প্রীতির)। ওর খুব আগ্রহ ছিল বলে আমি বলেছিলাম, ‘ওখানে শয়তান আছে। জায়গাটা কুফা’।” আশফাক বলেন, “আগের মেয়েটি কোত্থেকে পড়েছে দেখতে চাইত ও।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, কেনো ৬ মাস আগে একইঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। ৬ মাস আগে যখন একুট শিশু বারান্দা থেকে পড়ে আহত হলো তখন পরবর্তী শিশু গ্রহকর্মী রাখার পূর্বে কেনো একজন সচেতন সাংবাদিক নিরাপত্তমূলক ব্যবস্থা নিবে না। এবং একজন সচেতন সাংবাদিকের বাসায় শিশু গৃহকর্মী কীভাবে নিয়োগ পায় এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে। এবং সুষ্ঠূ তদন্তের মাধ্যমে আসলে কী ঘটেছিলো তা বের হয়ে আসুক সে প্রত্যাশা আমাদের সকলের।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে শাহজাহান রোডের জেনিভা ক্যাম্প সংলগ্ন ভবনের নবম তলায় আশফাকুল হকের বাসা থেকে পড়ে মারা যায় প্রীতি উরাং নামের ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরী।