মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। এখনো কিছু বিষয়ের মীমাংসা বাকি রয়েছে। পরবর্তী সময়ে অগ্রগতি অর্জনের জন্য আমাদের খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে কথা বলব। চুক্তি শেষ পর্যন্ত তাদের ওপর নির্ভর করবে ও তাদের সম্মত হতে হবে। চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আমরা শেষ পর্যায়ে পৌঁছাইনি।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে হাজারো মানুষের নিহত হওয়া বন্ধ করব। প্রেসিডেন্ট পুতিনও এমনটি দেখার জন্য আমার মতোই আগ্রহী। আমরা খুব শিগগিরই আপনার সঙ্গে আবারও কথা বলব। তখন পুতিন বলেন, পরবর্তী বার মস্কোতে। পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি শিগগিরই হতে যাচ্ছে। যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে একটি বিষয়ে একমতে পৌঁছানো যায়নি। এ কারণেই চুক্তি হয়নি। তবে বিষয়টি কী, তা বলেননি ট্রাম্প।
বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, আলাস্কায় দুই নেতার বৈঠক খুবই ইতিবাচক হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে পেতে এ আলোচনা উভয় দেশকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
আলাস্কার হাইভোল্টেজ বৈঠকের পর ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর টেলিফোনে যুক্ত হন ন্যাটো মহাসচিবসহ ইউরোপের রাষ্ট্রপ্রধানরা। পরে জেলেনস্কি জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে সোমবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ভার্চুয়ালি ট্রাম্পের সঙ্গে লম্বা ও বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। প্রথমে ঘণ্টাখানেক আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলি। পরে ইউরোপের নেতারাও আমাদের সঙ্গে যোগ দেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, পুতিনের সঙ্গে পরবর্তী রাউন্ডের আলোচনায় ইউক্রেনসহ তিন দেশের নেতারই উপস্থিত থাকা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি পর্যায়ে ইউরোপীয় নেতাদেরও থাকা জরুরি।
এরপর জেলেনস্কিকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন ইউরোপীয় নেতারা। এ বৈঠকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারোল নাভ্রোৎস্কি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টাব, ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন দার লায়েন উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সেরা উপায় হচ্ছে সরাসরি শান্তি চুক্তির দিকে যাওয়া। এতে যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং কোনো রকমের যুদ্ধবিরতি চুক্তির তুলনায় অনেক ভালো কিছু হবে। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি। বলেছেন, সোমবার ওভাল অফিসে ইউক্রেনের নেতার সঙ্গে বসা হচ্ছে তার। সব ঠিকঠাক হলে, তারপর আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করব। এতে সম্ভবত, লাখ লাখ লোকের জীবন বেঁচে যাবে।
ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকস্থলের বাইরে আমেরিকানদের বিক্ষোভ : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের অনেক আগে থেকেই আলাস্কার অ্যাঙ্করেজ সিটির মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন শত শত আমেরিকান। ইউক্রেনের পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করার প্ল্যাকার্ডও বহন করেন। ইউক্রেন থেকে অপহরণ করা ২০ সহস্রাধিক শিশুকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ থেকে পুতিনের প্রতি দাবি জানানো হয়। ১৫৮ বছর আগে আলাস্কা বিক্রি করে রাশিয়া। তার পর এটি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯তম রাজ্যে পরিণত হয়। সেই আলাস্কায় অনুষ্ঠিত হলো পুতিন-ট্রাম্পের তিন ঘণ্টার অধিক সময়ের বৈঠক, যেখানে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের কোনো চুক্তি হয়নি। তবে গণমাধ্যমে কথা বলার সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসব এবং সে সময়েই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ সুগম হবে। ট্রাম্প জানান, পুতিন বলেছেন- ইউক্রেনে হামলা চালানোর সময় যদি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকতেন তাহলে এ যুদ্ধ হতো না। এ নিয়ে তিনি পুতিনের প্রশংসা করেছেন। এ সময় রাশিয়ার হামলা ঠেকাতে না পারার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দোষারোপ করেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের কয়েকবার টেলি-সংলাপ হলেও ইউক্রেনে হামলার পর এটাই ছিল সামনাসামনি প্রথম বৈঠক।
আপনার মতামত লিখুন :