প্রিয় মাঠের পাশেই চিরঘুমে


hadayet প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৪, ২০২৩, ৪:০০ পূর্বাহ্ন / ৪০
প্রিয় মাঠের পাশেই চিরঘুমে

সান্তোসের ১৪ তলা ‘নেক্রোপোল একুমেনিকা’ সিমেট্রি গিনেস বুকে নাম তুলেছে সেই ১৯৯১ সালে। তবে এত দিনে বুঝি নাম ছড়াল সমাধিস্থলটির। গতকাল মঙ্গলবার এখানেই ফুটবলের রাজাকে সমাহিত করা হয়েছে। ১৪০০ ভল্টের এই সমাধিস্থলকে উচ্চতার জন্য ডাকা হয় ‘স্বর্গের খুব কাছাকাছি’। এ সমাধিস্থল থেকে আবার পরিস্কার দেখা যায় সান্তোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়াম। ১৪ তলার সবচেয়ে কোনার কবরে সমাহিত করা হয়েছে পেলেকে, যেন স্বর্গের কাছাকাছি শুয়ে প্রিয় মাঠটাকেও ইচ্ছে হলেই দেখতে পারেন। সত্যিকারের রাজার মতোই সমাহিত হলেন পেলে।

লাখো ভক্তের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে গতকাল শেষ বিদায় নিলেন ব্রাজিলিয়ানদের আদরের ‘ও রেই’। গতকাল ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা ডি সিলভার নেতৃত্বে পেলের শেষযাত্রায় ভক্ত-সমর্থকের ঢল নেমেছিল। সাও পাওলো রাজ্যের উপকূলবর্তী শহর সান্তোসের রাস্তায় পেলের কফিন নিয়ে প্রদক্ষিণের সময় পুরো শহর যেন রাস্তায় নেমে এসেছিল। শেষযাত্রা গিয়ে থামে সান্তোসের সবচেয়ে বড় সিমেট্রি নেক্রোপোল একুমেনিকায়। সেখানে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সমাহিত করা হয় পেলেকে।দুই দিনব্যাপী পেলের এই শেষকৃত্য শুরু হয় সোমবার সান্তোসের হোম ভেন্যু ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। ১৯৫৬ সালে এ ক্লাবে যোগ দিয়ে খেলেছেন ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত। এ মাঠে খেলেই বিশ্বজয়ী হয়েছেন তিনি। সেই চিরচেনা আঙ্গিনায় তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। গতকাল সস্ত্রীক এসেছিলেন ব্রাজিলের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। তাঁর সঙ্গে দেশটির বেশ ক’জন মন্ত্রী ও এমপি ছিলেন। প্রেসিডেন্ট লুলা কিংবদন্তি ফুটবলারের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আয়োকিকে সান্ত্বনা দেন। প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা জানানোর পরই শেষযাত্রার জন্য সান্তোসের এই স্টেডিয়াম থেকে বের করা হয় কফিন। সাও পাওলো রাজ্যের ফায়ার সার্ভিসের একটি বিশেষ গাড়িতে করে সান্তোস ও ব্রাজিলের জাতীয় পতাকা মোড়ানো পেলের কফিন ঘোরানো হয় উপকূলবর্তী এ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক। গাড়িতে তাঁর কফিনের পাশে ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। স্টেডিয়াম থেকেই এই শবযাত্রায় কফিনবাহী বিশেষ গাড়িটির পেছনে ছিল কয়েকশ মোটরবাইক। আর রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে ফুটবলের রাজার এই শেষযাত্রায় শামিল হয়েছে ব্রাজিলের অগুনতি মানুষ। তাদের অধিকাংশের গায়ে ছিল সান্তোসের ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো জার্সি এবং হাতে ছিল সান্তোসের বিশাল বিশাল পতাকা। আর এসব পতাকায় ছিল পেলের ছবি। অনেকের গায়ে ব্রাজিলের হলুদ জার্সিও ছিল।

শবযাত্রা পেলের শতবর্ষী মায়ের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ‘দোনা সেলেস্তে’ নামে ব্রাজিলিয়ানদের কাছে পরিচিত পেলের মা শততম জন্মদিন পালন করেন গত ২০ নভেম্বর। দুই বছর আগে পেলের ভাই ‘জায়ের’ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। গত ২৯ ডিসেম্বর হারালেন আরেক ছেলেকে।
পেলের এই শেষকৃত্য শুরু হয় গত সোমবার, তাঁর মৃত্যুর চার দিন পর। তিনটি বিশ্বকাপজয়ী এ ফুটবলার কোলন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে গত বৃহস্পতিবার ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার ভোররাতে আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে পেলের কফিন নিয়ে আসা হয় সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। সেখানে তাঁকে গতকাল সকাল পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানায় সর্বসাধারণ। সোমবার সকাল থেকেই সান্তোসের স্টেডিয়ামের পাশে ভিড় জমাতে থাকে মানুষ। বিশাল ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। স্টেডিয়ামের মাঝখানে অস্থায়ী একটি মঞ্চ তৈরি করে সেখানে রাখা হয় কফিন। আর মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কয়েকটি সারি বানিয়ে দেওয়া হয়। পেলের কফিনের ওপরের অংশ খুলে দেওয়া হয়। একটি সাদা চাদরে জড়ানো ছিল তাঁর শরীরের ওপরের অংশ। সাদা রংয়ের ফুল ছড়ানো ছিল কফিনে। ছেলে এডিনহোর নেতৃত্বে পেলের কফিন বয়ে আনা হয়। এর পর পেলের কপালে হাত রেখে প্রার্থনা করে শ্রদ্ধা জানানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেন এডিনহো। পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আয়োকি একটি ক্রুশ পেলের দেহের ওপর রাখেন।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল স্টেডিয়ামের গেট। সেদিন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, কনমেবল প্রেসিডেন্ট আলেজান্দ্রো ডমিঙ্গেজ, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি গিলমার মেন্দেজসহ দেশটির গণমান্য অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমারেরও থাকার কথা ছিল। তবে তিনি প্যারিস থেকে আসেননি। নেইমারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন তাঁর পিতা নেইমার সিনিয়র।