সারা দেশে চার হাজারের বেশি গ্রেপ্তার


hadayet প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২৪, ২:২৬ পূর্বাহ্ন / ১২
সারা দেশে চার হাজারের বেশি গ্রেপ্তার

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে পুলিশের ওপর হামলা, স্থাপনা ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় এ পর্যন্ত ২০১টি মামলা হয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ গ্রেপ্তার হয়েছে দুই হাজার ২০৯ জন। একই সময়ে সারা দেশে চার হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউ এলিফ্যান্ট রোড থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। এ্যানির বড় ভাই হ্যাপী চৌধুরীর বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। পাশাপাশি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর ছেলে সানিয়াতসহ আরো অনেক নেতাকর্মীকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা আটক করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলশান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পার্থকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জানা গেছে, আন্দালিব রহমান পার্থর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বিকেলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাঈদ মিয়া আন্দালিব রহমান পার্থকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চলমান অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা টাকার বিনিময়ে টোকাই ও ছিন্নমূলদের দিয়ে তাণ্ডব চালান।

তাঁরা রাজধানীর উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। গতকাল মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সরকার পতনের আন্দোলন বাস্তবায়নে বিএনপি নেতা মো. আব্দুল আজিজ সুলতান টোকাই ও ছিন্নমূল শ্রেণির লোকদের দিয়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডারদের নির্দেশনা দেন। নির্দেশনায় একজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মারলে পাঁচ হাজার টাকা এবং একজন পুলিশ সদস্য মারলে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সহিংসতাকারীরা যেন ঢাকা ছাড়তে না পারে সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতাকারীরা যেন ঢাকা শহর ছাড়তে না পারে, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

বিপ্লব কুমার বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ক্ষোভ ও দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, দেশে উন্নয়নের যে জোয়ার প্রধানমন্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, এই সন্ত্রাসী চক্র বেছে বেছে সেগুলোতে হামলা করেছে। সেতু ভবনে হামলা করেছে। মেট্রো রেল প্রকল্পের মূল সেন্টার সেতু ভবন, পদ্মা সেতুরও মূল সেন্টার সেতু ভবন।

এসব জামায়াত-বিএনপি চক্রকে ধরার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার পুলিশ তাই করবে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসীদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার জন্য ডিএমপি কাজ করছে। এই কাজ আরো বেগবান করা হবে। ঢাকার ভেতরে যারাই থাকুক না কেন, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে ডিএমপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ঢাকায় নিরাপত্তার কোনো হুমকি আছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপির এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়ে আছে। আমাদের ব্লকড রেইড চলমান। ব্লকড রেইড ছাড়াও ঢাকায় দিনরাতে পুলিশের অপারেশন চলমান। সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিক আর যেখানেই থাকুক, পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে দেশের যে প্রান্তেই পালিয়ে যাক না কেন আমরা তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করব।’

বিপ্লব কুমার বলেন, পুলিশের পোশাকের ওপর আঘাত করা মানে আইজিপির ওপর আঘাত করা, কমিশনারের (ডিএমপির) ওপর আঘাত করা। যারা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করেছে, তাদের কালো হাত আইনগতভাবে ভেঙে দেওয়া হবে।

সারা দেশে গ্রেপ্তার
গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ১৪ মামলায় আসামি করা হয়েছে সাত হাজারের বেশি। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ জনসহ গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৭৪ জন। এ ছাড়া গাজীপুরে ৩৩ মামলায় ১৭৭ জন, চট্টগ্রামে নতুন এক মামলাসহ মোট ১৭ মামলায় এ পর্যন্ত ৪০৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার হয় ৩৫ জন। এ ছাড়া ফেনীতে এ পর্যন্ত ৭০ জন, গাইবান্ধায় ৭৭ জন, ঈশ্বরদীতে ৩০, লালমনিরহাটে দুই, নীলফামারীতে ৫৯, শেরপুরে ১০ জন, সিরাজগঞ্জে ১৫৬ জন ও বরগুনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নাশকতাকারীদের তথ্য চাইল পুলিশ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতাকারী-দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গত বুধবার এক বার্তায় এ অনুরোধ জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, নাশকতা সৃষ্টিকারী ও দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে তথ্য এবং নাশকতার ছবি/ভিডিও ফুটেজ দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সহযোগিতা করলে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। তথ্য দেওয়ার জন্য ০১৩২০০০১২২২ ও ০১৩২০০০১২২৩ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়।