যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে চূড়ান্তভাবে তা ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘ আলোচনা ও নেগোসিয়েশনের পরে গতকাল এ-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। তবে এর সঙ্গে পুরোনো গড় শুল্কহার ১৫ ও পণ্যভেদে ১৬.৫ শতাংশ যুক্ত হয়ে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৩৫ থেকে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর দেশটির আরোপিত শুল্ক বাধা অনেকটাই কেটে গেল। যা দেশের রপ্তানি খাতের সম্প্রসারণকে সহায়তা করবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল দফায় দফায় বৈঠক করে। এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সেখান থেকে আমদানি বাড়াতে ২৫টি বোয়িং ও ৭ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর বাইরে আরও কিছু নন ডিসক্লোজার চুক্তি করা হয়েছে ইউএসটিআরের সঙ্গে। তবে সেসব চুক্তির বিষয়ে সরকার কিংবা ইউএসটিআর কারও পক্ষ থেকেই এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ওয়াশিংটন সময় গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে এই নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করা হয়, যা কানাডা বাদে আগামী ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। হোয়াইট হাউস নতুন করে ৬৭টি দেশের জন্য শুল্কহার ঘোষণা করে। যার মধ্যে তাইওয়ান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও রয়েছে। নতুন আদেশ অনুযায়ী, শুল্কহার ১০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হবে। এই শুল্ক কার্যকর হবে ৭ আগস্ট, রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, সিরিয়া, লাওস ও মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি শুল্কের আওতায় পড়েছে, ৪০-৪১ শতাংশ। আর যেসব দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করা হয়নি, তাদের ওপর ভিত্তিগত (বেজ লাইন) ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে বলে জানানো হয়। যদিও এটা ১ আগস্ট শুক্রবার থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউস থেকে কার্যকরের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৭ শতাংশ শুল্কের কথা জানিয়েছিল। সেখান থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। পরে এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাম্পকে চিঠি লিখে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করার আহ্বান জানান। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাতে সাড়া দেন। সেখান থেকে দর কষাকষি করে আরও ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনে বাংলাদেশ। ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আদেশে বাংলাদেশ ছাড়াও কয়েক ডজন দেশের ওপর মার্কিন শুল্কের হার তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫, ভারতের ওপর ২৫, ব্রাজিলের ওপর ১০, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯, মিয়ানমারের ওপর ৪০, ফিলিপাইনের ওপর ১৯, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।
রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই, প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব-বাণিজ্য উপদেষ্টা : ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা জানান, ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে প্রত্যাশা করেছিলাম।’
বড় অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই পেল বাংলাদেশ : বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ১ আগস্ট সময়সীমার আগেই বাংলাদেশের ওপর ধার্য করা পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ফেলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশ বড় ধরনের একটি অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন, যা আমাদের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান অথবা যৎসামান্য বেশি এবং ভারতের থেকে ৫ শতাংশ কম। সুতরাং আমেরিকার বাজারে আমাদের রপ্তানি পণ্য প্রতিযোগিতামূলক থাকবে। তৈরি পোশাকশিল্প ও এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত স্বস্তিকর ঘটনা।
শুল্ক চুক্তি সফল, ঢাকার জন্য আলাদা কোনো শর্ত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র-প্রেস সচিব : যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ বর্ধিত শুল্কহার নির্ধারিত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সফল হয়েছে। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ভালো। বাংলাদেশের জন্য আলাদা কোনো শর্ত আরোপ করেনি যুক্তরাষ্ট্র, বাকি দেশগুলোর মতো একই শর্ত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছিল, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য, তুলাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যও আনতে চায় বাংলাদেশ। এতে করে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
আপনার মতামত লিখুন :