
নিজস্ব প্রতিবেদক
গণহত্যার ইতিহাসকে শুধু একাডেমিক পরিসরে রাখার পরিবর্তে জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে আগামীকাল সোমবার। ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাস্ট্রিবোর্ডের চেয়াম্যান ড. মুনতাসীর মামুন। এটি বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আনার পথে আরেকধাপ এগিয়ে যাওয়া বলে মনে করছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা এর রূপকল্প জানতে চাইলে বলেন, একাডেমিক পরিসরের বাইরে গণহত্যার ইতিহাসকে তুলে ধরার বিভিন্ন সৃজনশীল প্ল্যাটফর্মে কাজ করা এর উদ্দেশ্য। মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার ইতিহাস রচনাকে ত্বরান্বিত করতে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য গবেষক তৈরি করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের গণহত্যাকে তুলে ধরা এবং স্বীকৃতি অর্জন করার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বিভিন্ন নীতি প্রণয়নের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ সৃষ্টি করবে এই প্রতিষ্ঠান।
’১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর। ২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাড়ীতে এই জাদুঘর ও আর্কাইভের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই জাদুঘরকে জমি এবং বাড়ী উপহার দেন এবং সেটিকে সংস্কার করে খুলনার ২৬ সাউথ সেন্ট্রাল রোডের নিজস্ব ভবনে গণহত্যা জাদুঘর নতুন করে যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন।
তরুণ প্রজন্মের কাছে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার চিত্র তুলে ধরতে জাদুঘরে রয়েছে প্রতীকি বধ্যভূমি। রয়েছে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র। রয়েছে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লিখিত প্রেস রিলিস, ১৯৭২ সালে শহিদ পরিবারকে দেওয়া চেক, চিঠিসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুষ্প্রাপ্য সব নথিপত্র ও নিদর্শন রয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণের সেই মাইকটি রয়েছে জাদুঘরে।
জাদুঘরের উদ্যোগ ও বাস্তবতা বিষয়ে জানতে চাইলে মুনতাসীর মামুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বড় উপাদান গণহত্যা ও নির্যাতনের ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে না এলে এতো বড় উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পথে এই প্রকল্প অনন্য উদ্যোগ। এটি এই দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম জেনোসাইড মিউজিয়াম। আমরা এর কাজ করতে পেরে গর্বিত, আনন্দিত। এবং সবচেয়ে বিশেষ দিক হলো, এটি করা হয়েছে ঢাকার বাইরে, খুলনায়। এখন থেকেই এটাকে কেন্দ্র করে গণহত্যা বিষয়ক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে এগুতে আর বাধা থাকবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। এখানে ইতোমধ্যে দেশের বাইরে থেকেও জেনোসাইড বিষয়ক গবেষকরা এসেছেন, বিস্মিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধে সর্বসাধারণের অবদানের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ১৭ মে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে খুলনার ময়লামোতায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অংশ গণহত্যা-নির্যাতনের দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য ছবি এবং ভাস্কর্য রয়েছে জাদুঘরে। পরবর্তীতে এটিকে আরও সুসংগঠিত করে সোমবার উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
/
 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                         
                         
                         
                         
                        
আপনার মতামত লিখুন :