সমন্বয়হীনতা আর কোন্দলে দুর্বল হয়ে পড়ছে বিএনপি


hadayet প্রকাশের সময় : মে ১১, ২০২৪, ৭:৫২ পূর্বাহ্ন / ৩৫
সমন্বয়হীনতা আর কোন্দলে দুর্বল হয়ে পড়ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গেল ১৭ বছরেরও বেশি সময় রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। নেতৃত্ব সংকটে দলের অভ্যন্তরে সমন্বয়হীনতা, কোন্দল এবং তৃণমূলে বিশৃঙ্খলার প্রকট আকার ধারণ করেছে। চলমান উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে তা আরও স্পষ্ট হয়ে ঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠ থেকে সরাতে পারছে না বিএনপি। এক সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা দলটির সাংগঠনিক অবস্থা এখন অনেকটাই নাজুক হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করেছে বিএনপি। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে দলটির মাঠ পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী ইতোমধ্যেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, যাদেরকে পরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে, গত আটই মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৭৯ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিষ্কার করার আগে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে, এমনকি সরাসরি কথা বলেও থামানোর চেষ্টা করেছে দলটি। যদিও কোনো প্রচেষ্টাতেই শেষ পর্যন্ত কাজ হয়নি। উল্টো আগামী ২১শে মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিএনপি’র আরও অন্তত ৬১ নেতাকর্মী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই আমি ভোটে প্রার্থী হয়েছি। তখন তো তারা নিষেধ করেনি। বলেছে যে, যাওয়া যেতে পারে। এরপর মার্কার দেওয়ার দুইদিন আগে আমাকে হঠাৎ করে বললো যে, এখন নির্বাচন করা যাবে না। কিন্তু ততক্ষণে আমি এলাকার জনগণকে কথা দিয়ে ফেলেছি যে, (নির্বাচন থেকে) সরে যাবো না।’

দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। দীর্ঘ এই সময়ে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেগুলোর আগে-পরে সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি দলটি।

দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন বড় ছেলে তারেক রহমান, যিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় যেসব নেতারা এতদিন সামনে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই এখন হয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন, অথবা অসুস্থ হয়ে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এখন অনেকটাই নাজুক হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন। আর এ অবস্থার জন্য দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন কেউ কেউ।

জোবাইদা নাসরিন বলেন, “তারেক জিয়া লন্ডন থেকে একটা নির্দেশ দিচ্ছেন, দেশে রিজভী এক ধরনের নির্দেশ দিচ্ছেন, আবার দেখা যাচ্ছে, দলের মহাসচিব আরেক রকম নির্দেশ দিচ্ছেন। এই যে তাদের মধ্যে একটা সমন্বয়হীনতা এবং সেখানে সমন্বিত কোনও নির্দেশনা নেই, পলিসি নেই, উদ্দেশ্য নেই। এতে দলের নেতাকর্মীরা অনেক সময় বুঝতে পারছেন যে, কার কথা শোনা উচিৎ।”

এসব কারণে দাবি আদায়ে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় নেতাকর্মীদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছেন বলে মনে করেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন “যে দল ক্ষমতার বাইরে থাকে। সেই দলের মধ্যে যখন এমন উপদল এবং বিক্ষিপ্ততা তৈরি হয়, তখন কিন্তু নেতাকর্মীদের মধ্যেও একটা হতাশা এবং দোদুল্যমানতা তৈরি হয়।”

এমন পরিস্থিতি দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদেরকে একতাবদ্ধ রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও নেতৃত্ব সংকটের কথা স্বীকার করছেন না বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, সবকিছু ঠিকই আছে। বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, “কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো ঘটনা কিছু ঘটেছে। তবে বিএনপির লাখ-লাখ নেতাকর্মীর তুলনায় তাদের সংখ্যা খুবই সামান্য।”